চাঁদনী চকে এক দিন

Mikhil Rialch

Last updated: Jun 16, 2017

Want To Go ? 
   
যদি সংঘবদ্ধ ভিড় দেখতে চান তাহলে মেট্রো ধরে চলে আসুন চাঁদনী চকে। সরু অলিগলি আর প্রতিটি বাঁকে ঠাসা দোকানদার, হকার এবং উপচে পড়া ভ্রমনার্থীদের আনাগোনা, মাথার ওপর দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া বিতস্তত টেলিফোন এবং ইলেকট্রিকের তার, এবং অর্থপূর্ন পরিবেশের ব্যস্ত বাজার চাঁদনী চকের ভিড়কে আকৃষ্ট করে। ভারত ভ্রমণকারীদের কাছে এর দর্শন অত্যন্ত লোভনীয়। হয়তো এই কারণেই ভ্রমণকারীদের ভ্রমণ তালিকায় থাকা অন্যতম নামটি চাঁদনী চক, এর সমতুল্য হয়তো আর কিছু নেই।

রাস্তার প্রখ্যাত খাবারের দোকান থেকে শুরু করে গলির প্রতিটি বাঁকে লেগে থাকা ইতিহাস, চাঁদনী চক – দিল্লীর অন্যতম পুরনো প্রতিবেশী যা গুরগাওের দমবন্ধ করা পরিবেশ আর সিটি সেণ্টারের কৃত্রিম প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে নিজেকে অদ্ভুত এক রঙিন মোড়কে মুড়ে রেখেছে। জমাটবহুল শৃঙ্খলাবধ্যতায় মোড়া চাঁদনী চকে, অতীতের বিষাদরঞ্জিত প্রাণবন্ত আবেগ মিশে আছে।

আধুনিক শহর আর দ্রুত বিন্যস্ত বিশ্বের স্পর্শে স্পর্শিত হয়েও চাঁদনী চক এখনও পর্যন্ত অন্য এক অভিরুচিতে রঞ্জিত। আসুন, দেখাই এই ভিন্ন স্বাদের চাঁদনী চকে কিভাবে কাটাবেন একটি দিন।

 

রসস্বাদন

delhi-chandni-chowk-food

দিল্লী যদি স্ট্রিট ফুডের রাজ্য হয় তাহলে চাঁদনী চক অবশ্যই তার রাজধানী। করিমের কাবাব, নটরাজ সুইটের চাট আর দহি ভাল্লা, ক্ষেমচাঁদ আদেশ কুমারের দৌলতের চাট বা পুরনো বিখ্যাত জিলাপিওলার সুস্বাদু জিলাপি- সবধরনের সুস্বাদু খাবার অপেক্ষা করে আছে আপনাদের জন্য যার রসস্বাদন অবশ্যই একদিনে সম্ভব নয়। পরোটা গলির বিভিন্ন ধরনের পরোটা অন্য খাবারের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ দেয় না। আমাদের মতে, সবকিছুরই অল্প অল্প চেখে দেখুন আর ভাবুন এখনও অনেক কিছুরই স্বাদগ্রহণ বাকি আছে।

 

কেনাকাটার আনন্দনিকেতন

delhi-shopping-chandni-chowk

যদি ভিড়ের বাধা অতিক্রম করে বাজারের ভিতর ঢুকতে পারেন তাহলে বুঝবেন লোভনীয় খাবার ছাড়াও চাঁদনী চকে আরও অনেক জিনিস আছে। ছোট দোকান আর গুমটি যা আপনার কলেজের  হোস্টেলের রুম থেকেও অনেক ছোট যারা বিক্রি করছে প্রায় সব কিছুই- কাপড় থেকে কার্পেট, ইলেক্ট্রনিকসের জিনিস থেকে স্মারক, হস্তনির্মিত স্মৃতিসৌধ থেকে ঘরের জিনিস, হস্তশিল্প এবং আরও অনেক কিছু। দরদাম আপনাকে অতি অবশ্যই করতে হবে, তাই এই খেলায় আপনার কৌশল প্রয়োগ করুন এবং বাড়ি ফিরুন আপনার সেই পছন্দের জিনিস নিয়ে। 

 

ক্যামেরার মেলা

অনেকেই জানেন না যে চাঁদনী চক ক্যামেরা সম্বদ্ধিত জিনিসপত্রের জন্য এশিয়ার এক প্রখ্যাত বাজার। আপনি যদি এসপ্ল্যানেড রোড ধরে ফটো মার্কেটের দিকে যান তাহলে দেখতে পাবেন বহু গুমটি যেখানে ক্যামেরার ব্যাগ, ট্রাইপড, ব্যাটারি, চার্জার, লেন্স, ফিল্টার এবং অ্যালবাম বিক্রি হচ্ছে। এখানেরই সবথেকে পুরনো দোকান প্রীতম স্টুডিওতে গিয়ে দেখুন। এই ঐতিহাসিক স্টুডিওতে যেতে বেশ ভালই লাগবে যেখানে এই দ্রুত বিন্যস্ত পৃথিবীর ছোঁয়া খুবএকটা পড়েনি। দেখবেন যেন আপনি ক্যামেরা সংক্রান্ত বিষয়ে অবগত থাকেন কারণ এখানে জাল জিনিস পাওয়াটা খুব একটা অসম্ভব কিছু নয়। যদিও বহুদিনের পুরনো দোকানগুলি আসল জিনিস বিক্রি করে তবে তাতে দরদাম করা যায় না।

 

ইতিহাসের পিছটান

red-fort-chandni-chowk

দিল্লী সেইসব স্মৃতিসৌধ, ইতিহাস, সাংস্কৃতিক পরিবেশের আবেশে আচ্ছন্ন যা বহুদিন আগেই মুছে গেছে। বেশিরভাগ দিল্লীবাসী এই শৈবাল আর আধুনিকত্বে ডুবে যাওয়া স্থাপত্যকলা থেকে অবগত নয়। জামা মসজিদ এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক দোকানগুলি মুঘল যুগের গৌরবময় ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। চাঁদনী চকে বহু ধার্মিক স্থাপত্য আর হাভেলী রয়েছে যা ভয়ানক ভূতুড়ে অনুভূতি জাগায় আর অন্বেষণের জন্য হাতছানি দেয়। শুরু করুন শ্রী দিগম্বর জৈন লাল মন্দির বা শিখ গুরুদ্বার সিস গঞ্জ সাহিব দিয়ে। আপনি যদি আরও দুঃসাহসিক কিছু করতে চান তাহলে দেখুন বেগম সাম্রু, মির্জা গালিবের হাভেলী আর জিনাত মহল। অবশ্যই দেখুন খাজাঞ্চী হাভেলী যেখানে শাহজাহানের বেশিরভাগ হিসাবরক্ষকেরা ছিলেন। এই হাভেলী থেকে লাল কেল্লা পর্যন্ত মাটির ভিতরের একটি গোপন রাস্তা আছে। বলা হয়, এখান দিয়ে সুরক্ষিতভাবে হিসাবরক্ষকেরা লাল কেল্লায় টাকা পাঠাতেন।

সত্যি বলতে চাঁদনী চকে বহু কিছু দেখার আছে, অনুসন্ধান করার আছে যা একদিনের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু যারা একদিনে ঘুরতে চান তাদের জন্য এগুলো বিশেষ আকর্ষনীয়। তাই দেরি না করে চাঁদনী চকের পরের মেট্রো  নিন এবং বলুন কিভাবে কাটালেন আপনার একটি দিন।

More Blogs For Food & Shopping